কোলাহল শহর জীবনের সীমাহীন ব্যস্ততা ছেড়ে কিছু সময় প্রকৃতির
সাথে সময় কাটাতে চাইলে সময় করে কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টে ঘুরে আসতে পারেন।
যেখানে প্রকৃতির মাঝেও আপনি আধুনিকতার অপূর্ব সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। সেই সাদৃশ্য আপনার
মন ও প্রানকে করবে পুলকিত দিবে সজীবতা ও প্রানবন্ত মন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে মাত্র
১৬ কিলোমিটার দূরে জেলেদের পেঁচার দ্বীপ নামে একটি গ্রাম। এই গ্রামের পাশ ঘেঁষে বয়ে
গেছে রেজু খাল। আর সেখানেই গড়ে উঠেছে নান্দনিক মারমেইড বিচ রিসোর্ট। হিমছড়ি ও ইনানী
বিচের মাঝামাঝি জায়গায় এর অবস্থান। হিমছড়ি থেকে ইনানী যাওয়ার পথে রাস্তার পশ্চিম পাশে
ছোট ছোট অনেক কুড়ে ঘর দেখা যায়। এক পাশে ঝাউবন সমৃদ্ধ সমুদ্র সৈকত অন্যপাশে আকাশছোঁয়া
অনেক গুলো পাহাড়। আর মধ্যভাগ দিয়ে চলে গেছে টেকনাফ পর্যন্তপ্রায় ৮৪ কিলোমিটার কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
কোলাহল মুক্ত অবাক করার মতো সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে এই রিসোর্টটিতে।
ব্যতিক্রমী এই রিসোর্টে যে একবার ঘুরে এসেছে তাকে সেখানে
বার বার টেনে নিয়ে যাবে।
বিয়ের পরেই আমাদের প্রায় সবারই ইচ্ছা থাকে হানিমুন (মধচন্দ্রিমা)
করতে যাওয়ার। দেশের ভিতরে হানিমুন করার জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ জায়গা মনে হলো কক্সবাজারের
এই রিসোর্টটিকে । আমরা আগেই বুকিং দিয়ে গিয়েছিলাম।
তাই এয়ারপোর্ট থেকে তাদের একটি মাইক্রোবাস আমাদের নিতে এসেছিলো। মাইক্রো ভাড়া বাবদ ২০০০
টাকা দিতে হয়। আর সিএনজি বলে রাখলে ভাড়া নিবে ৪০০ টাকা।
সেখানে পৌঁছার পর তাদের নিজস্ব বাগানের ফুলের মালা পড়িয়ে
যখন বরণ করে নেওয়া হয় তখন এক অদ্ভূদ অনুভূতি চলে আসবে।
তারপর সদ্য গাছ থেকে তোলে আনা ডাবের জলে আপনার মনের ও প্রাণের তৃষ্ণা ভরিয়ে দিবে।
সেখানে বিভিন্ন দাম ও মানের ৩০ টার মতো কটেজ আছে। বাইরে
থেকে দেখলে মনে হবে কুড়ে ঘর ছনের ছাউনী। কিন্তু কুড়ের ঘরের ভিতরটা আধুনিকতার ভরপুর।
বিশেষ করে স্নানরুমে ঢুকলে মনটাই যেন ভরে যাবে। বাজারের শ্যাম্পুর বদলে নিজস্ব ভেষজ
শ্যাম্পু, সাবান ও অন্যান্য পরিবেশন করা থাকে।
সময় করে সুইমিং পুলে গিয়ে কিছুক্ষণ সাঁতার
কেটে সময় কাটাতে পারেন। তাছাড়া কায়কিং করতে পারেন সঙ্গীকে
সাথে নিয়ে। সাঁতার জানলেও লাইভ জ্যাকেট পড়ে নিতে ভুলবেন না। জীবনের জন্য সতর্ক থাকা
ভালো। সমুদ্র সৈকতে সাইকেলিং করা আর একটি অন্যরকম আনন্দ দিবে।
প্যাকেজে গেলে কখন কি খাবেন তা নিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা
করতে হবেনা । তারাই সময় মতো কখন কি খাওয়ানো হবে জানিয়ে দিবে। খাবারের স্থান আপনার পছন্দ
মতো তারা সাজিয়ে দিবে। রাতে থাকবে ভেরি স্পেশিয়াল ক্যান্ডেল নাইট ডিনার। প্রাকৃতিক পরিবেশে খাবার পরিবেশন ও খাবারের মান
তৃপ্তি দিবে আপনাকে। বিভিন্ন রকমের সী ফুড ও স্বাদে ভরপুর থাকবে আপনার টেবিল। আর যারা
ওয়াকিং গেস্ট হিসেবে সেখানে যান মনে রাখা ভালো যে, সেখানে মানের কারণে খাবারের দামটা
একটু বেশি।
মারমেইডে প্রায় ৫০ আইটেমের বুফেট ব্রেকফাস্ট এর ব্যবস্থা
আছে। এটা সকল গেস্টের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সকাল ৭ টাকা থেকে ১০ টা পর্যন্ত যতবার খুশি
খেতে পারবেন। কি নেই সেই ব্রেকফাস্টে? বিভিন্ন রকম ফ্রেশ জুস থেকে শুরু করে দেশি, বিদেশি
বিভিন্ন আইটেম পাবেন। মূলত অনেক বিদেশী এখানে অবস্থান করে তাই এই ব্যবস্থা করা।
বিকেল বেলা কোলাহল মুক্ত পরিবেশে বীচ ধরে হেঁটে বেড়াতে
চমৎকার লাগে। হাটতে হাটতে রেজু খালের পাড়ে চলে যাওয়া যায়। খালের বুক বেয়ে সাম্পান নৌকা
গুলো যাওয়া আসা করতে দেখা যাবে। একটু হেটে বেড়ানোর সময় খেয়াল করলে দেখা যাবে আপনার
উপস্থিতি টের পেয়ে ছোট ছোট লাল কাঁকড়া গুলো দৌড়ে পালাচ্ছে। অপূর্ব লাগবে সেই দৃশ্যগুলো।
রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ালেও ভয়ের কিছু নেই। পুরো বীচ জুড়েই আছে তাদের নিরাপত্তা কর্মীরা।
আমি আমার অভিজ্ঞতায় বলতে চাই, নিরিবিলি সুন্দর প্রাকৃতিক
দৃশ্যের সাথে সমুদ্রকে আলিঙ্গন করলে চাইলেআপনিও আসতে পারেন মারমেইড বিচ রিসোর্টে। আমার বিশ্বাস আপনার ছুটি ভালো কাটবে।
বিমান, বাস, ট্রেন এই তিন পথেই সেখানে যেতে পারবেন। তবে
ট্রেনে গেলে চট্টগ্রামে নামতে হবে। সেখান থেকে আবার বাসে করে কক্সবাজার আসতে হবে। কক্সবাজার
কলাতলী থেকে মারমেইড পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া নিবে ১৫০- ২০০ টাকা। সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট।
0 Post a Comment:
Post a Comment