বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বসে বিভিন্ন রকমের ফলের বাজার। মধুপুর বিখ্যাত আনারস এর জন্য, রাজশাহী আমের জন্য, তেমনি বরিশাল বিখ্যাত পেয়ারা বাজার এর জন্য। ধারণা করা হয় বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি এই তিন জেলায় এশিয়ার বৃহত্তম পেয়ারার চাষ হয়। মনোমুগ্ধকর বিস্তীর্ন এই পেয়ারার বাগান দেখতে যে কেউ আসতে পারেন বরিশালে।
ছুটি মানেই আনন্দ ছুটি মানেই খুশির জোয়ার। আর এই আনন্দ এবং খুশির মাতোয়ারা তখনই পরিপূর্ণটা লাভ করবে যখন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দূরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন।
প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা বানিজ্য সব কিছুর জন্যই সমৃদ্ধ বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়ায়। দিগন্তের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ালেও দেখে শেষ করা যাবেনা রূপের আধার রাশিয়ার লীলাভূমি
রূপকথার গল্পের কোন এক রাজকুমারী বিচরণ করছে, এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার সৌন্দর্য দিয়ে আগত সকলকে মোহবিষ্ট করছে। সেই রাজকুমারীর হলো নাম জাফলং। তার মোহে আবিষ্ট হয়ে প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে শত শত পর্যটক উপস্থিত হচ্ছে জৈন্তা পাহাড়েরর পাদদেশে অবস্থিত জাফলং এ
সবুজ
পাহাড় আর ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে কিছুক্ষণ গা ভিজিয়ে মন প্রাণকে শীতল করে আনন্দে ভরিয়ে তোলতে
ঘুরে আসতে পারেন ঝর্ণার রানী নামে খ্যাত মিরসরাইয়ের খৈয়াছরা ঝর্ণা। শিল্পীর নান্দনিক
তুলিতে আঁকা যেন এই ঝর্ণাটি। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিদিন অনেক ভ্রমণ পিপাসু মানুষ
তার কাছে ছুটে আসে। দেশের অনেক গুলো বৃহত্তম ঝর্ণার মধ্যে এটি একটি। খৈয়াছড়া এলাকার
পাহাড়ে অবস্থান হওয়ার কারণে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছরা ঝর্ণা। এর গঠনশৈলি অন্যান্য
ঝর্ণা গুলো থেকে একটু আলাদা। এর মোট ০৯ টি ধাপ আছে যা বাংলাদেশের আর কোন ঝর্ণাতে তা
দেখা যায়নি। এছাড়া খৈয়াছরা পাহাড়ে প্রতিনিয়ত জ্বলে এমন একটি জায়গা আছে যা সেখানকার
একটি মূল আকর্ষণের একটি। স্থানীয় অধিবাসীদের ভাষ্যমতে বৃষ্টিতেও নাকি এই আগুন নিভে
না। তাই প্রতি বছর অনেক ভ্রমণ পিপাসু এই খৈয়াছরায় ভ্রমণ করতে আসে। অনেকের ধারণা যাতায়াত
উন্নত ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন হলে এখানে আরও অনেক মানুষ আসবে।
অবস্থানঃ
মিরসরাই
উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২
কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। এক কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে পায়ে
হেঁটে যেতে হবে। বাঁশের সাকো, জমির আইল, আঁকাবাকা পাহাড়ী পথ, ছোট ছোট কয়েকটি ছরা, অন্তত
৪টি পাহাড় পেরিয়ে যখন সেখানে পৌছে ঝর্ণার জলে গা ভিজিয়ে নিবে তখন প্রাণটা জুড়িয়ে যাবে
যে কোন পর্যটকের। ছুটির দিনে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এবং সবুজে সমারোহ পাহাড় ও ঝর্ণার
সেতুবন্ধন দেখতে অনেক শিক্ষার্থী ও পর্যটক খৈয়াছরায় ছুটে আসেন। বর্তমানে খৈয়াছড়রা ঝর্ণা
জাতীয় উদ্যানের আওতাভুক্ত একটি দর্শনীয় স্থান। পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে অবাধ
যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।
কিভাবে
যাবেনঃ
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল
থেকে যাতায়াতের জন্য চট্টগ্রামগামী হানিফ, শ্যামলী, এনা, ইউনিক, সৌদিয়া, এস আলম গ্রীন
লাইন সহ আরও অনেক বাস সার্ভিস আছে। ভাড়া নিবে এসি ১০০০- ১২০০ টাকা আর নন এসি ৪৮০ টাকা।
কেউ ট্রেনে আসতে চাইলে কমলাপুর থেকে উঠে ফেনীতে এসে নেমে যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে
ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাস ও সিএনজি করে মিরসরাই আসতে হবে। তবে বাসে আসাটায় সব থেকে ভালো হয়।
বাসে আসলে আপনাকে মিরসরাই পার হয়ে বড়তাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছরা আডিয়াল স্কুলের সামনে
নামতে হবে। তারপর সেখানে নেমে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করলে কিভাবে সেখানে যেতে হবে তারা
দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে ঝিরি পর্যন্ত আপনি সিএনজি নিতে পারেন। ভাড়া দরদাম করলে ৭০-১০০
টাকা নিবে। খৈয়াছরা ঝর্ণায় যাওয়ার পথ একটায়। তাই আসা যাওয়ার মাঝে অনেক ভ্রমণ পিপাসুর
দেখা পেয়ে যাবেন। আর আপনি চাইলে বাস থেকেই নেমেই গাইড নিয়ে নিতে পারেন।
করণীয়ঃ
পাহাড়ী উচু নিচু পথ দেড় ঘন্টার মতো হাঁটতে
হবে। তাই বাস থেকে নেমেই কিছু খেয়ে সেখান থেকে রওনা দিবেন। সাথে পানি ও শুকনো খাবার
রাখবেন যেন পথে দূর্বল হয়ে না পড়েন। সাবধানে হাঁটবেন যেন কোন দূর্ঘটনা না ঘটে।
থাকা-
খাওয়াঃ
মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে থাকা ও খাওয়ার জন্য
বেশ কিছু ভালো হোটেল ও রেস্তোরা আছে। আপনি সেখানে নাম মাত্র মূল্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা
করে নিতে পারবেন।
কোলাহল শহর জীবনের সীমাহীন ব্যস্ততা ছেড়ে কিছু সময় প্রকৃতির
সাথে সময় কাটাতে চাইলে সময় করে কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টে ঘুরে আসতে পারেন।
যেখানে প্রকৃতির মাঝেও আপনি আধুনিকতার অপূর্ব সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। সেই সাদৃশ্য আপনার
মন ও প্রানকে করবে পুলকিত দিবে সজীবতা ও প্রানবন্ত মন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে মাত্র
১৬ কিলোমিটার দূরে জেলেদের পেঁচার দ্বীপ নামে একটি গ্রাম। এই গ্রামের পাশ ঘেঁষে বয়ে
গেছে রেজু খাল। আর সেখানেই গড়ে উঠেছে নান্দনিক মারমেইড বিচ রিসোর্ট। হিমছড়ি ও ইনানী
বিচের মাঝামাঝি জায়গায় এর অবস্থান। হিমছড়ি থেকে ইনানী যাওয়ার পথে রাস্তার পশ্চিম পাশে
ছোট ছোট অনেক কুড়ে ঘর দেখা যায়। এক পাশে ঝাউবন সমৃদ্ধ সমুদ্র সৈকত অন্যপাশে আকাশছোঁয়া
অনেক গুলো পাহাড়। আর মধ্যভাগ দিয়ে চলে গেছে টেকনাফ পর্যন্তপ্রায় ৮৪ কিলোমিটার কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
কোলাহল মুক্ত অবাক করার মতো সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে এই রিসোর্টটিতে।
ব্যতিক্রমী এই রিসোর্টে যে একবার ঘুরে এসেছে তাকে সেখানে
বার বার টেনে নিয়ে যাবে।
বিয়ের পরেই আমাদের প্রায় সবারই ইচ্ছা থাকে হানিমুন (মধচন্দ্রিমা)
করতে যাওয়ার। দেশের ভিতরে হানিমুন করার জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ জায়গা মনে হলো কক্সবাজারের
এই রিসোর্টটিকে । আমরা আগেই বুকিং দিয়ে গিয়েছিলাম।
তাই এয়ারপোর্ট থেকে তাদের একটি মাইক্রোবাস আমাদের নিতে এসেছিলো। মাইক্রো ভাড়া বাবদ ২০০০
টাকা দিতে হয়। আর সিএনজি বলে রাখলে ভাড়া নিবে ৪০০ টাকা।
সেখানে পৌঁছার পর তাদের নিজস্ব বাগানের ফুলের মালা পড়িয়ে
যখন বরণ করে নেওয়া হয় তখন এক অদ্ভূদ অনুভূতি চলে আসবে।
তারপর সদ্য গাছ থেকে তোলে আনা ডাবের জলে আপনার মনের ও প্রাণের তৃষ্ণা ভরিয়ে দিবে।
সেখানে বিভিন্ন দাম ও মানের ৩০ টার মতো কটেজ আছে। বাইরে
থেকে দেখলে মনে হবে কুড়ে ঘর ছনের ছাউনী। কিন্তু কুড়ের ঘরের ভিতরটা আধুনিকতার ভরপুর।
বিশেষ করে স্নানরুমে ঢুকলে মনটাই যেন ভরে যাবে। বাজারের শ্যাম্পুর বদলে নিজস্ব ভেষজ
শ্যাম্পু, সাবান ও অন্যান্য পরিবেশন করা থাকে।
সময় করে সুইমিং পুলে গিয়ে কিছুক্ষণ সাঁতার
কেটে সময় কাটাতে পারেন। তাছাড়া কায়কিং করতে পারেন সঙ্গীকে
সাথে নিয়ে। সাঁতার জানলেও লাইভ জ্যাকেট পড়ে নিতে ভুলবেন না। জীবনের জন্য সতর্ক থাকা
ভালো। সমুদ্র সৈকতে সাইকেলিং করা আর একটি অন্যরকম আনন্দ দিবে।
প্যাকেজে গেলে কখন কি খাবেন তা নিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা
করতে হবেনা । তারাই সময় মতো কখন কি খাওয়ানো হবে জানিয়ে দিবে। খাবারের স্থান আপনার পছন্দ
মতো তারা সাজিয়ে দিবে। রাতে থাকবে ভেরি স্পেশিয়াল ক্যান্ডেল নাইট ডিনার। প্রাকৃতিক পরিবেশে খাবার পরিবেশন ও খাবারের মান
তৃপ্তি দিবে আপনাকে। বিভিন্ন রকমের সী ফুড ও স্বাদে ভরপুর থাকবে আপনার টেবিল। আর যারা
ওয়াকিং গেস্ট হিসেবে সেখানে যান মনে রাখা ভালো যে, সেখানে মানের কারণে খাবারের দামটা
একটু বেশি।
মারমেইডে প্রায় ৫০ আইটেমের বুফেট ব্রেকফাস্ট এর ব্যবস্থা
আছে। এটা সকল গেস্টের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সকাল ৭ টাকা থেকে ১০ টা পর্যন্ত যতবার খুশি
খেতে পারবেন। কি নেই সেই ব্রেকফাস্টে? বিভিন্ন রকম ফ্রেশ জুস থেকে শুরু করে দেশি, বিদেশি
বিভিন্ন আইটেম পাবেন। মূলত অনেক বিদেশী এখানে অবস্থান করে তাই এই ব্যবস্থা করা।
বিকেল বেলা কোলাহল মুক্ত পরিবেশে বীচ ধরে হেঁটে বেড়াতে
চমৎকার লাগে। হাটতে হাটতে রেজু খালের পাড়ে চলে যাওয়া যায়। খালের বুক বেয়ে সাম্পান নৌকা
গুলো যাওয়া আসা করতে দেখা যাবে। একটু হেটে বেড়ানোর সময় খেয়াল করলে দেখা যাবে আপনার
উপস্থিতি টের পেয়ে ছোট ছোট লাল কাঁকড়া গুলো দৌড়ে পালাচ্ছে। অপূর্ব লাগবে সেই দৃশ্যগুলো।
রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ালেও ভয়ের কিছু নেই। পুরো বীচ জুড়েই আছে তাদের নিরাপত্তা কর্মীরা।
আমি আমার অভিজ্ঞতায় বলতে চাই, নিরিবিলি সুন্দর প্রাকৃতিক
দৃশ্যের সাথে সমুদ্রকে আলিঙ্গন করলে চাইলেআপনিও আসতে পারেন মারমেইড বিচ রিসোর্টে। আমার বিশ্বাস আপনার ছুটি ভালো কাটবে।
বিমান, বাস, ট্রেন এই তিন পথেই সেখানে যেতে পারবেন। তবে
ট্রেনে গেলে চট্টগ্রামে নামতে হবে। সেখান থেকে আবার বাসে করে কক্সবাজার আসতে হবে। কক্সবাজার
কলাতলী থেকে মারমেইড পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া নিবে ১৫০- ২০০ টাকা। সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট।
যারা প্রকৃতি
ঘেরা পাহাড়, নদী, বন, ঝর্ণা, সমুদ্র একই জায়গায় দেখতে চান তারা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড
ঘুরে আসতে পারেন। এক সাথে প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য দেখার
সুযোগ খুব কম জায়গায় পাওয়া যাবে। যেখানে আকাশ, পাহাড় ও ঝর্ণা মিলে মিশে এক সেতু বন্ধনে
আবদ্ধ অন্যদিকে সমুদ্রের গর্জন আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে
কাছে যাওয়ার। উপরে পাহাড়ের উদারতা আর নিচে পাহাড়ের পাদদেশের ঝর্ণা, বন ও বনানীর মুগ্ধতায়
পরিপূর্ণ করবে আপনার দেখার অনুভূতি গুলোকে। অর্থাৎ বলা
যায় ভ্রমণের আনন্দকে পরিপূর্নতায় নিয়ে আসবে সীতাকুন্ড
ভ্রমণ।
সীতাকুন্ড ভ্রমণে যে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আপনাকে
মুগ্ধ করবে সেগুলো হলো-
খৈয়াছড়া ঝর্ণা, চন্দ্রনাথ
পাহাড় ও মন্দির, সীতাকুন্ড ইকো পার্ক, কমলদহ ঝর্ণা,
ঝরঝরি ঝর্ণা, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, বাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, কুমিরা ঘাট অন্যতম।
এছাড়া জাহার ভাঙ্গার কারখানা ঘুরে দেখে যেতে পারেন। তবে এতো গুলি দর্শনীয় স্থান একদিনে দেখে শেষ করা যাবেনা। তাই সীতাকুন্ডের
সব গুলো জায়গা ঘরে দেখতে চাইলে তিন দিন হাতে নিয়ে আসলে ভালো হয়।
ঢাকার সায়দাবাদ
থেকে সীতাকুন্ডে আসে এমন অনেক বাস পাবেন। অর্থাৎ চট্টগ্রামগামী যে সকল বাস আসে সে বাসে
করেই আপনাকে সীতাকুন্ডে আসতে হবে। যেখান থেকেই আসুন আপনাকে সীতাকুন্ড উপজেলার বড় দারোগারহাট
বাজারে নামতে হবে। ঢাকা থেকে বাস এর মানভেদে ভাড়া ৩০০-১০০০ টাকা। সীতাকুন্ডে আসা যায়।
আর যার চট্টগ্রাম থেকে আসবেন অলংকার মোড় থেকে বাস, ম্যাক্সি বা সিএনজি আসতে পারবেন।
বাস ভাড়া ৭০-৮০ টাকা নিবে। স্টেশনে নেমে সিএনজি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করতে পারেন। একেক
জায়গার জন্য একেক রকম ভাড়া নিবে। তাই তাদের সাথে ভালো ভাবে দরদাম করে নিয়ে যাওয়াই ভালো।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে পায়ে হেটে যাওয়ার মজাই আলাদা।
সীতাকুন্ডে
থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। যোগাযোগ করে বুকিং করতে
পারেন। ফোন-০১৮২৭৩৩৪০৮২; ০১৮২৫১২৮৭৬৭। ভাড়া পড়বে ৩০০-৬০০ টাকা। এছাড়া সেখানে বেশ কয়েকটি
রেস্ট হাউস আছে আপনারা সেখানেও যোগাযোগ করে থাকতে পারবেন। এখানে বেশ কয়েকটি মোটামুটি
ভালো মানের রেস্তোরা আছে সেখানে আপনি খাবার খেতে পারবেন। সীতাকুুন্ডে আল আমিন (ফোন: 01711270293/01818698200) রেস্তোরায় দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। খাবার ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি ভালো মানের খাবার পাবেন।
ভ্রমণ মানেই
আনন্দ এটা আমরা সবাই জানি। ভ্রমণের আনন্দ তখনই পরিপূর্ণ আনন্দের হয় যখন ভ্রমণ থেকে সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারি।
তাই ভ্রমণের আগেই খেয়াল রাখতে হবে আপনি সুস্থ আছেন কিনা। কারণ সীতাকুন্ডের পাহাড়, ঝর্ণা,
বন দেখতে অনেকটা পথ আপনাকে পায়ে হেটেও যেটে হবে। তাই দেহে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য সাথে
শুকনো খাবার ও প্রচুর পরিমানে পানি নিবেন। বাঁশবাড়িয়া ও গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতঃ সীতাকুন্ডের পাহাড় ঝর্ণা ঘুরাঘুরি শেষ করে খুব সহজেই আপনি বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত ও গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ঘুরে আসতে পারেন। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা করে আপনি সেখানে যেতে পারবেন। আর যদি নিজে গাড়ি নিয়ে যান তাহলে তো খুব সহজেই দুটি সমুদ্রসৈকত ঘুরে আসতে পারবেন। আপনার ভ্রমণ আনন্দের হোক।
ছুটির দিনে
কোথায় ঘুরতে যাবো এই নিয়ে আমরা অনেক চিন্তায় থাকি। ঢাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘুরে
দেখার মতো অনেক কিছু আছে যেখান থেকে আপনি বিনোদন ও শিক্ষা দুটিই পেতে পারেন। আজ এমনই
একটি জায়গার নাম বলবো যেখানে গেলে আপনি প্রায় ৮০০ বিরল প্রজাতির প্রায় ১৮,০০০ উদ্ভিদ দেখে
আসতে পারবেন। এই বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ বাগানটির নাম হলো বলধা গার্ডেন। ঢাকার নারিন্দার
কাছে ওয়ারী এলাকায় এটির অবস্থান। যদি উদ্ভিদ বা ঐতিহাসিক সম্পর্কে কিছু
শিখতে চান তাহলে এই উদ্ভিদ উদ্যান ঘুরে আসতে পারেন।
তদানীন্তন ভাওয়াল
জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০৯ সালে বাগানটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটা জমিদার
বাগান বাড়ি নামে পরিচিত ছিলো। ঢাকার উচ্চবিত্তরা এখানে বিনোদনের জন্য আসতো। বলধা জমিদার
এখানে দুটি উদ্যান তৈরি করেছিলেন। বৃহত্তর
সিবিলি ও ক্ষদ্রতর সাইকি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা প্রজাতির গাছ , ঔষধি গাছ ও
ফুল এনে এই উদ্ভিদ উদ্যানটি সমৃদ্ধ করতে থাকেন জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী।
৩.৩৮ একর জায়গার উপর এই উদ্ভিদ উদ্যানটি অবস্থিত। জমিদারের মৃত্যুর পর এক সময় সাইকী
ও সিবিলি এ দুটি উদ্যানকে এক সাথে বলধা গার্ডেন নামকরণ করা হয়। অনেকের ধারণা বলধা নাম
থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ করা হয়েছে। জমিদার এখানে এইটি পারিবারিক জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন।
উদ্ভিদ ও ফুলের জাদুঘরঃ
পৃথিবীর দেশ
থেকে এনে রোপন করা উদ্ভিদের সম্ভার বলধা গার্ডেন উদ্ভিদ ও ফুলের জাদুঘর নামে খ্যাত।
গার্ডেনে প্রধানত বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ক্যাকটাস, গ্রীনহাউসের গাছপালা, জলজ উদ্ভিদ,
গোলাপ, শিলালগ্ন প্রজাতি ও দেয়ালের লতা, বৃক্ষশালা ও বিবিধ গাছগাছালি রয়েছে। সব মিলিয়ে
এখনে ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮,০০০ উদ্ভিদ আছে। এখানকার প্রায় সব গুলি উদ্ভিদই বিদেশ থেকে
আনা এবং খুবই দুষ্প্রাপ্য। দেশ বিদেশের অনেক খ্যাতিমান লোকেরা বলধা গার্ডেন দেখতে আসতেন।
কবি রবীন্দ্রনাথ বাগানটি দেখতে এসে জাপান থেকে সংগ্রহ করে আনা “ক্যামেলিয়া ” ফুলের
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর বিখ্যাত “ক্যামেলিয়া” কবিতাটি রচনা করেছিলেন। বাগানের দেখার
মতো উদ্ভিদ হচ্ছে “সেঞ্চুরি প্ল্যান্ট” এটি শতবর্ষে মাত্র একবার ফুটে। মিশরের ফারাওদের
মমি করে রাখার জন্য যে উদ্ভিদ ব্যবহার করা হতো সেই ঐতিহাসিক “বাওবাব”গাছটিও এখানে আছে। এটি উপমহাদেশের মধ্যে এমন একটি
ঐতিহাসিক উদ্ভিদ উদ্যান যা দর্শনাথীদের জন্য খুবই
আকর্ষণীয় স্থান ।
ব্যবস্থাপনাঃ
জমিদার নারায়ন চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রথমে কলকাতার
হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণ ট্রাস্টের অধীনে ছিলো। ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সরকারের আমলে একটি
দল এর ব্যবস্থাপনায় ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার গার্ডেনের ঐতিহ্য ধরে
রাখার জন্য গার্ডেনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন বিভাগকে দেওয়া হয়। বর্তমানে বলধা গার্ডেন
জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন এর একটি অংশ।
প্রবেশ মূল্যঃ জনসাধারন ১০ টাকা, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের
জন্য ০৫ টাকা।
খোলার সময়/সময়সূচিঃ
সপ্তাহের প্রতিদিনই
সকাল ০৮ টা থেকে বিকাল ০৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর
১২ টা থেকে ০২ টা মধ্যাহ্ন বিরতি।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার সব জায়গা
থেকেই গুলিস্থান আসার মতো অনেক বাস আছে। গুলিস্থানের ফ্লাই ওভার ব্রীজের নিচে থেকে
রিক্সা নিয়ে সরাসরি ওয়ারি বলধা গার্ডেনে চলে আসতে পারবেন। আবার মতিঝিল দিয়ে আসলে রিক্সা
নিয়ে টিকাতলী মোড় হয়ে রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে খুব সহজে চলে আসতে পারবেন।
গুলিস্থান ও মতিঝিল থেকে রিক্সা ভাড়া দরদাম করে উঠলে ৩০-৪০ টাকা নিবে।
সমুদ্র
দেখলেই মনে হয় যদি এই সমুদ্রের মতো বিশালে হৃদয়ের মানুষ হতে পারতাম। এই রকম আপসোস অনেকেই করে থাকে। বাংলাদেশে প্রধান যে দুটি সমূদ্র সৈকত আছে
তার মধ্যে কক্সবাজারের পরেই কুয়াকাটার অবস্থান। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা
বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটা এমন একটি সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে
আপনি সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দুটিই দেখতে পাবেন। মনে হবে সমুদ্রের বুক ছিড়ে উদিত হচ্ছে
আবার এই বুকের মধেই আবার নিজেকে লুকিয়ে নিচ্ছে। সাগর পাড়ের সূর্যদয় দেখা অন্য রকম মজা দিবে।
তার জন্য আপনাকে কষ্ট করে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। ঘুম থেকে উঠেই আপনাকে কাউয়ার
চর নামক স্থানে যেতে হবে। সেখানে আপনি মটরবাইকে বা ভ্যানে করেও যেতে পারবেন। ভ্যানে
যেতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য যে একবার দেখবে তাকে কুয়াকাটায় বার বার টেনে নিয়ে যাবে। অপরূপ সুন্দর একটি দৃশ্য যা না দেখলে কারোর বর্ণনাতে আপনার মন ভরাতে
পারবেনা।
সূর্যদয় দেখা শেষ হয়ে গেলে মন প্রাণ ভরে সমুদ্রের জলে নেমে স্নান করে নিতে পারেন। বিভিন্ন
জায়গার মতো এখানে চোরাবালির ভয় খুবই কম। কাউয়ার চরের সমুদ্র পাড়ের লাল কাকড়া গুলোর
এদিক সেদিক ছুটাছুটির দৃশ্য গুলো আপনাকে অন্য রকম একটি মজা দিবে। সময় করে পাশের জেলে পল্লীতেও
ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে বিভিন্ন রকমের শুটকি দেখতে পাবেন। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক
মাছের শুটকি আপনি এখানে তুলনামূলক কম দামে পাবেন। এখানকার শুটকি দেশের বাইরেও রপ্তানি
করা হয়।
সৈকতে
ঘুরতে আসা দর্শনাথীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য এখানে মটরসাইকেল বা ঘোড়ার ব্যবস্থা আছে। সময়
অনুসারে দর দাম করে ভাড়া নিতে পারেন। সমুদ্র উপকূলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্রলার এবং স্পিড
বোট কিংবা ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা পাবেন। সেগুলোর মাধ্যমে আপনি সৈকতের আশে পাশের অপূর্ব
দৃশ্য সমূহ অবলোকন করে চোখে দেখার দৃষ্টিকে পরিতৃপ্ত করে তোলতে পারবেন। খুলনা সাতক্ষীরার
মতো না হলেও কুয়াকাটার সুন্দরবনের দৃশ্য গুলোও আপনার মনকে এক নতুন আনন্দ দিবে।
কুয়াকাটায়
ঘুরতে গেলে সেখানকার আদিবাসি রাখাইন পল্লী ঘুরে আাসতে ভুলবেন না। তাদের সাধারণ জীবন
যাপন এবং পুরানো স্থাপত্য নিদর্শন দেখে আপনাকে মুগ্ধ করবে। দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দিরটি
এই রাখাইন পল্লীতে অবস্থিত। গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন বিশাল আকৃতির মূর্তি ( যার উচ্চতা
৩৬ ফুট ) দেখতে পাবেন। মন্দির এর ভিতরের ভাব গম্ভীর পরিবেশ দেখে মনে হবে আপনি থাইল্যান্ড
বা কোন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী দেশে এসেছেন। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১০ কিঃলিঃ দূরে
এর অবস্থান। অটো, ভ্যান বা রিক্সা করে সেখানে যেতে পারবেন।
কিভাবে যাবেন ঃ
কুয়াকাটায়
সড়ক এবং নদী পথ দুই পথেই যাওয়া যাবে। গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে এসি ও ননএসি দুই রকমের
বাস পাবেন। নন এসি ভাড়া নিবে ৫০০-৫৫০ টাকা। এসি ৭০০ টাকার মতো। সময় লাগবে ১১-১২ ঘন্টা।
তবে বরিশাল বা কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য নদী পথেই যাওয়াটা একটি অন্য রকম রোমাঞ্চ মনে হবে।
কারণ বাংলাদেশের অন্য জেলা গুলোতে আমরা সড়ক পথেই গিয়ে থাকি। তাই কুয়াকাটায় নদী পথে
যেতে হলে যাওয়ার একদিন আগে সদরঘাট থেকে টিকিট কেটে নিতে পারেন। প্রতিদিন বিকাল ৪টা
থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায় কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। কেবিন ভাড়া নিবে ৯০০-১১০০ টাকা।
ডাবল কেবিন ১৮০০-২০০০ টাকা। ডেকের ভাড়া সময় বুঝে ১৮০-২০০ টাকা। ভ্রমণে ১০-১৫ জনের বা তার উর্ধ্বে হলে ডেকে অনেক মজা করে যাওয়া যায়। পটুয়াখালী বাস স্ট্যান্ড
থেকে সকাল ৬টা থেকে প্রতি ঘন্টায় ছেড়ে যায় কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। লঞ্চঘাট থেকে বাস স্ট্যান্ড
এর ভাড়া ২৫-৩০ টাকা। সেখান থেকে জন প্রতি ১০০ টাকা কুয়াকাটা পর্যন্ত।
কুয়াকাটায়
থাকার জন্য ভালো মানের অনেক হোটেল মোটেল রয়েছে। এছাড়া দুটি ডাক বাংলো এবং সাগর
কন্যা পর্যটন হলিডে হোমস আছে। সেই সাথে কিছু গেস্ট হাউস আছে। যেগুলোতে আপনি মান বুঝে ৩০০
টাকা ২০০০ টাকার মধ্যেই থাকার সুব্যবস্থা করে নিতে পারবেন।
হোটেলের
আশে পাশেই ঘরোয়া পরিবেশে তৈরী বেশ কয়েকটি খাবার দোকান আছে। খুব কম খরচে আপনি সেগুলোতে
তৃপ্তিভরে খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই অর্ডার করার করার আগে দাম জেনে নিবেন।
বুড়িগঙ্গা
নদীর তীরে অবস্থিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ লালবাগ
কেল্লা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্রমুঘল সুবাদার মুহাম্মদ আজম শাহ ১৬৭৮ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে
সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার উত্তরসুরী, মুঘল
সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন, কিন্তু শেষ করতে
পারেননি।
ইতিকথা: মুঘল রাজপুত্র আজম শাহ (সম্রাট আওেরঙ্গজেবের
তৃতীয় পুত্র) বাংলার সুবাদার থাকাকালীন ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মানকাজ শুরু করেন। নির্মানকাজ
শেষ হবার আগেই মাঠারা বিদ্রোহ দমনের জন্য
সম্রাট আওরঙ্গজেব রাজপুত্র শাহ আজমকে দিল্লি
ডেকে পাঠান। একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মানের পর দুর্গ নির্মানের কাজ থেমে যায়। ১৬৮০
খ্রিস্টাব্দে সুবাদার শায়েস্তা খাঁ পুনরায় সুবাদার হিসেবে বাংলায় এসে দুর্গের নির্মানকাজ
শুরু করেন। সায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত
রাহমাত বানুর (পরী বিবি) অকাল মৃত্যু ঘটে। কন্যার মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁ দুর্গটি
অপয়া মনে করেন। ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মানকাজ বন্ধ করে দেন। শায়েস্তা
খাঁ ঢাকা ত্যাগ করলে দুর্গটির জনপ্রিয়তা হারায়। ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তরের এটিই ছিল প্রধান কারণ। মুঘল আমল সমাপ্ত
হওয়ার পর দুর্গটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে এলাকাটি ‘‘আওরঙ্গবাদ’’ নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘‘লালবাগ ‘’ হয় এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে।
পরী বিবির সমাধি: লালবাগ কেল্লার তিনটি স্থাপনার মধ্যে
অন্যতম একটি পরী বিবির সমাধি। পরী বিবি ছিলেন বাংলার মুঘল সায়েস্তা খাঁর কন্যা। এই
মাজারটি নির্মাণ করেন শায়েস্তা খাঁ তাঁর কন্যার স্মরণে। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল
দরজার মধ্যে জনসাধারণের জন্য একটি দরজা উন্মুক্ত রয়েছে। উন্মুক্ত এই দরজা দিয়ে ঢুকলে
সোজা চোখে পড়বে পরী বিবির সমাধি। পরী বিবির অন্য নাম ইরান দুখত রাহমাত বানু। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজম এর সাথে ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দ
৩ মে পরী বিবির বিয়ে হয়। ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে অকালমৃত্যুর পর তাঁকে নির্মানাধীন লালবাগ
কেল্লার অভ্যন্তরে সমাহিত করা হয়। পরী বিবির মাজার এর স্থাপনাটি চতুষ্কোণ।
দর্শনার্থীদের
পরিদর্শনের সময়সূচি
এপ্রিল
থেকে সেপ্টেম্বর
বৃহস্পতি
থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ১:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা (দুপুর ১টা থেকে ১:৩০মি.
বিরতি)
শুক্রবার
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২:৩০মি/দুপুর ২:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত
সোমবার
দুপুর ২:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত
অক্টোবর
থেকে মার্চ
বৃহস্পতি
থেকে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (দুপুর ১টা থেকে ১:৩০মি. বিরতি)
শুক্রবার
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২:৩০মি এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত
ছুটিতে কোথায় ঘুরতে যাবো এই নিয়ে ঢাকায় অবস্থানরত অনেকেই চিন্তায় থাকে । সাপ্তাহিক ছুটিতে ঢাকায় ঘরে বেড়ানোর মতো অনেক দর্শনীয় স্থান আছে যেখানে আপনি আপনার পরিবার ও বন্ধ বান্ধব নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। তার মধ্যে পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল অন্যতম। আমার বিশ্বাস এখানে আপনি অনেক কিছু দেখে তৃপ্তি ভরে বাসায় ফিরতে পারবেন। আহসান মঞ্জিল দেখা শেষ করে সদরঘাটের লঞ্চঘাট দেখে যেতে ভুলবেন না।
আহসান মঞ্জিল নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী
এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। আহসান মঞ্জিল এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আব্দুল
গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন। আহসান
মঞ্জিলের নির্মাণকাল ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে থেকে
১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই জাদুঘরটি বাংলাদেশ
জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত জাদুঘর।
মুঘল আমলে এখানে
জামালপুর পরগণার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহর রঙমহল ছিল এই স্থানটি। তার পুত্র মতিউল্লাহ’র
নিকট তেকে রঙমহলটি ফরাসিরা ক্রয় করে এখানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। ১৮৩০ সালে
খাজা আলীমুল্লাহ ফরাসিদের নিকট থেকে ক্রয় করে নিজের বাসভবনে পরিণত করেন। এ
বাসবভনকে কেন্দ্র করে খাজা আব্দুল ঘণি মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানী নামকিএকটি ইউরোপীয়
নির্মাণ ও প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরী করান যার প্রধান ইমারত
ছিল আহসান মঞ্জিল।
এক মিটার উঁচু বেদীর উপর
স্থাপিত দ্বিতল প্রাসাদটি। এই প্রাসাদটির ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টি কক্ষ বিভিন্ন প্রদর্শনীর
জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা মোট ৪ হাজার ৭৭টি। জাদুঘরে
রয়েছে নওয়াব আমলের ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না, আলমারি,
সিন্দুক, কাচ ও চিনামাটির থালাবাসন, নওয়াবদের হাতির মাথার কঙ্কাল গজদন্ত, নওয়াবদের
ব্যবহৃত অলংকার, রুপা ও ক্রিস্টালের তৈরী চেয়ার-টেবিল, তৈলচিত্র, নাচঘর, সোনা ও
রুপার তারজালিকাজ আহসান মঞ্জিলের নকশা।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে তোষাখানা ও ক্রোকারিজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র এবং নওয়াব এস্টেটের
পুরনো অফিস এডওয়ার্ড হাইস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শন করা
হয়েছে। কিভাবে যাবেন ঃ ফার্মগেট থেকে গুলিস্তান আসার মতো অনেক বাস পাবেন। আবার যারা উত্তরা সাইট থেকে আসবেন তারাও গুলিস্তান পর্যন্ত আসে এরকম বেশ কয়েকটি বাস পেয়ে যাবেন। গুলিস্তানে নামার পর সরাসরি এখান থেকে রিক্সা করে আহসান মঞ্জিল যাওয়া যায়। ভাড়া দর দাম করে নিলে ৬০-৭০ টাকা নিবে। অথবা গুলিস্তান থেকে বাসে করে বাংলাবাজার আসতে পারেন। বাংলাবাজার থেকে রিক্সা করে আহসান মঞ্জিল যাওয়া খুব সহজ। ভাড়া ২০-৩০ টাকা নিবে।