Biloy Mrong

Biloy Mrong

Monday, June 4, 2018

ছুটিতে সিলেট ভ্রমন

ছুটিতে সিলেট ভ্রমন / Travel To Sylhet, Bangladesh.


ছুটি মানেই আনন্দ ছুটি মানেই খুশির জোয়ার। আর এই আনন্দ এবং খুশির মাতোয়ারা তখনই পরিপূর্ণটা লাভ করবে যখন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দূরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন। যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে চানপাহাড়, ঝর্ণা, বিল, নদী, বন এবং চায়ের রাজধানী দেখতে চান তাহলে আমি বলবো আপনি সিলেট ঘুরে আসুন। এক সাথে এতো উপভোগ্য সৌন্দর্য্য আর কোথায় পাবেন না। ঘুরতে বের হওয়ার আগে পরিকল্পনা করুণ কত দিনের জন্য যাবেন, কোথায় কোথায় যাবেন, কোথায় গিয়ে থাকবেন, আর কে কে যাবেন ইত্যাদি। মনে রাখবেন সুন্দর এবং সঠিক পরিকল্পনা আপনার অর্থ এবং সময় দুটিই বাচাবে।  তারপর যে জায়গায় যাবেন সে জায়গা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। এখন তো ডিজিটাল ইন্টানেটের যোগ। তাই সব কিছু্ ইন্টারনেট ঘেটে বের করতে পারবেন।


Bangladesh Tea Research Institute (BTRI) Sreemangal, Sylhet.

আপনাদের সিলেট ভ্রমণ যেন আনন্দ ও আরামদায়ক হয় তার জন্যই কিছু দিক নির্দেশনা পাবেন আমার এই লেখা থেকে। লেখাটি পড়ে অবশ্যই জানতে পারবেন সিলেটে কোথায় কি আছে এবং কিভাবে যাবেন ।
পূর্ব প্রস্তুতি:- যদি চার থেকে সাত দিনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন তাহলে অবশ্যই যা করতে হবে:-প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে ভ্রমণে কি কি নিবেন। কোথাও ঘুরতে গেলে অবশ্যই প্রয়োজনের বেশী কাপড় না নেওয়ায় ভালো অন্যথায় থলে ভারী হয়ে যাবে। কখন যাচ্ছেন (বর্ষা কাল/শীত কাল) সে অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করতে হবে। বর্ষা কালে এমন কাপড় নির্বাচন করতে হবে যে গুলো খুব সহজেই শুকিয়ে যাবে। আমার মতে সিলেট ভ্রমণের জন্য বর্ষাকাল সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ এই সময়টায় পুরো সিলেট সবুজে সমারোহ থাকে। মাধবকুন্ড, হাম হাম এর মতো বিভিন্ন ঝর্ণার শব্দ আপনাকে মুখরিত করবে। চা বাগানের সবুজের আবছায়া আপনার চোখে দেখার তৃষ্ণাকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে তোলবে।    

সাথে নিতে হবে- মোবাইল ও চার্জার, পাওয়ার ব্যাঙ্ক, চার্জলাইট, ছাতা, একাধিক জুতা/স্যানড্যাল, বিকাশ/রকেটে টাকা। প্রয়োজনের বেশি হাতে অনেক টাকা না নেওয়াই ভালো। আর ভ্রমণের আনন্দকে আরো উপভোগ্য ও স্মৃতিময় করার জন্য একটি ভালো ক্যামেরা সঙ্গে নিতে পারেন।

Pach Bhai Restaurant Sylhet. 



জাফলং :- সিলেট বললেই চা বাগানের ছবি ভেসে উঠে সবার। তবে আমি শুরুতে জাফলং এর কথা বলবো। সিলেট জেলা সদর হতে সড়ক পথে দূরত্ব মাত্র 56 কি.মি। জাফলংয়ে শীত ও বর্ষা এই দুই মৌসুমের সৌন্দর্যের রূপ ভিন্ন। বর্ষায় জাফলংয়ের রূপ যেন ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠে। জিরো পয়েন্ট, পিয়ান নদীর উপর ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, ডাউকি পাহাড়ের সবুজের সমারোহ সেই সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে আসা শুভ্র ঝর্ণাগুলো যে কোন মানুষের মন ভরিয়ে দিবে। স্বচ্ছ নদীর পানি, জাফলংয়ের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণ। নদীটা পার হলেই আপনি দেখতে পাবেন খাসিয়া পুঞ্জি (খাসিয়াদের গ্রাম)। ছিমছাম ও গোছালো এবং খুব সুন্দর খাসিয়া গ্রাম গুলো। সিলেটে বাস, ট্রেন ও আকাশ পথ এই তিন ভাবেই আসা যায়।

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত :-মাধবকুন্ড জলপ্রপাত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত। যেখানে যাওয়ার পথে আপনার চোখকে সিগ্ধতায় ভরিয়ে তোলবে সেখানকার চা বাগান ও পাহাড়ের অপূর্ব রূপ। পাহাড়ের বুক ছিড়ে বেরিয়ে আসা ঝর্ণা আপনার ভ্রমণকে সার্থক করে তোলবে। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলিতে অবস্থিত মাধবকুন্ড জলপ্রপাত (মাধবকুন্ড পুঞ্জি যেখানে খাসিয়া আদিবাসীরা বসবাস করে)। এর উচ্চতা প্রায় ১৬২ ফুট (১২ অক্টোবর ১৯৯৯-এর হিসাবমতে)। ঢাকা থেকে 350 কিলোমিটার  সিলেট সদর থেকে ৭২ কিলোমিটার,কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে ৩২ কিলোমিটার এবং কাঁঠালতলী থেকে কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। 


Enjoying with Nature 


বিছানাকান্দি: সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায়, রুস্তমপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এখানকার নদী দেখতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। খাসিয়া পর্বত থেকে নেমে আসা একটি ঝর্ণা এখানে একটি হ্রদের সৃষ্টি করেছে যা পিয়ান নদীর  সাথে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। বিছানাকান্দির মূল আকর্ষন হচ্ছে নদীর সাথে মিশে থাকা শিলা-পাথরগুলো। এখানকার শিলা-পাথর গুলো  প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসে। দেখে মনে হবে প্রকৃতি তার মনের মাধুরী মিশিয়ে শিলা-পাথর গুলো যেন সাজিয়ে রেখেছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে সাজানো শিলা-পাথরগুলো যেন নামের সার্থকতা বহন করছে।

লালাখাল:- সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। খালের সবচেয়ে আকর্ষনীয় যে বিষয় তা হচ্ছে বিভিন্ন রঙের পানি । নীল, সবুজ ও স্বচ্ছ পানি দেখে মনে হবে খালের একেক অংশে একেক ধরণের রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে। লালাখালের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। কিন্তু সেখানে হোটেল মোটেলের ব্যবস্থা না থাকায় আপনাকে সন্ধ্যের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে। নদীর স্বচ্ছ পানি দিয়ে নৌকা/ স্পীডবোটে করে যেতে পারবেন সেখানে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি নৌকা/স্পীডবোট ভাড়া করে নিয়ে যান।

রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট: সিলেটের গোয়াইন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র ‘‘সোয়াম ফরেস্ট’’ (জলবন) রাতারগুল। এই জলবনকে 1973 সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ। নদী ও হাওড় বেষ্টিত বনের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে রয়েছে হিজল-করগাছ। এটি সিলেটের সুন্দরবন নামেও খ্যাত। প্রায় 331 একর আয়তনের এই রাতারগুল। পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত হিজল, করচ, বরুনা, বেত আর মুর্তার ঘন ঝোপে প্রায় দূর্ভেদ্য উপমহাদেশের একমাত্র মিঠা পানির সোয়াম ফরেস্ট এই রাতারগুল।

লাউয়া ছড়া জাতীয় উদ্যান: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়া ছড়া জাতীয় উদ্যান। প্রত্যেকদিন অনেক পর্যটকের আগমনে ভরপুর থাকে এই জাতীয় উদ্যানটি। বাংলাদেশ সরকার 1997 খ্রিস্টাব্দে এই বনকেজাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য বন বিখ্যাত। উল্লূক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ। । লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন।

গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। এটি পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট। সিলেট বিভাগের প্রথম এবং একমাত্র পাঁচতারকা মানের আধুনিক বিলাসবহুল বিনোদনের সুবিধা আছে এখানে। সবুজ প্রকৃতি ও চা বাগানের মাঝখানে প্রায় ১৩.২ একর জায়গায় এই রিসোর্টটি গড়ে ওঠেছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে অথবা বন্ধুবান্ধবদের সাথে ছুটির দিনের সময়টুকু আনন্দে কাটাতে চাইলে ঘুরে যেতে পারেন গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ।


Grand Sultan Tea Resort & Golf 


মাধবপুর লেক: শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে পাত্রখলা চা বাগানে মাধবপুর লেকটি অবস্থিত। মৌলভীবাজার শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিনে ও শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। চারিদিকে কয়েকটি টিলা (পাহাড়) নিয়ে মাঝখানে ঝলমলে স্বচ্ছ টলমল পানি। পাহাড়/টিলার মধ্যে বিস্তীর্ণ চা-বাগান। শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত থাকে লেকটি। বর্ষায় কানায় কানায় পূর্ণ লেকটি টিলার উপড় থেকে খুব আকর্ষনীয় দেখায়।

সিলেটকে পর্যটকের দেশ বললেও মনে হয় ভুল হবে না। অসংখ্য পর্যটক এলাকা রয়েছে সিলেটে । যা আপনি ৭ দিনের ছুটিতেও ঘুরে শেষ করতে পারবেন না। আরো অনেক দর্শণীয় স্থান রয়েছে যেমন- বাইক্কা বিল, হামহাম ঝর্ণা, বিটিআরআই (চা গবেষনা কেন্দ্র) হাকালুকি হাওড়, ড্রিমল্যান্ড পার্ক এর মতো অনেক জায়গা ।


তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া




0 Post a Comment: