Biloy Mrong

Biloy Mrong

ভাসমান পেয়ারা বাজার, ঝালকাঠি, বরিশাল

বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বসে বিভিন্ন রকমের ফলের বাজার। মধুপুর বিখ্যাত আনারস এর জন্য, রাজশাহী আমের জন্য, তেমনি বরিশাল বিখ্যাত পেয়ারা বাজার এর জন্য। ধারণা করা হয় বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি এই তিন জেলায় এশিয়ার ‍বৃহত্তম পেয়ারার চাষ হয়। মনোমুগ্ধকর বিস্তীর্ন এই পেয়ারার বাগান দেখতে যে কেউ আসতে পারেন বরিশালে।

হাম হাম জলপ্রপাত

হাম হাম জলপ্রপাত’’ ‘‘হামহাম জলপ্রপাত’’ বাংলাদেশের, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার, জারকান্দির সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত

ছুটি মানেই আনন্দ ছুটি মানেই খুশির জোয়ার

ছুটি মানেই আনন্দ ছুটি মানেই খুশির জোয়ার। আর এই আনন্দ এবং খুশির মাতোয়ারা তখনই পরিপূর্ণটা লাভ করবে যখন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দূরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন।

রাশিয়ার দর্শণীয় স্থান সমূহ

প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা বানিজ্য সব কিছুর জন্যই সমৃদ্ধ বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়ায়। ‍দিগন্তের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ালেও দেখে শেষ করা যাবেনা রূপের আধার রাশিয়ার লীলাভূমি

প্রকৃতির কন্যা জাফলং

রূপকথার গল্পের কোন এক রাজকুমারী বিচরণ করছে, এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার সৌন্দর্য দিয়ে আগত সকলকে মোহবিষ্ট করছে। সেই রাজকুমারীর হলো নাম জাফলং। তার মোহে আবিষ্ট হয়ে প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে শত শত পর্যটক উপস্থিত হচ্ছে জৈন্তা পাহাড়েরর পাদদেশে অবস্থিত জাফলং এ

Saturday, July 28, 2018

ছুটির দিনে ঘুরে আসুন ঢাকার ঐতিহাসিক বলধা গার্ডেন


ছুটির দিনে কোথায় ঘুরতে যাবো এই নিয়ে আমরা অনেক চিন্তায় থাকি। ঢাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘুরে দেখার মতো অনেক কিছু আছে যেখান থেকে আপনি বিনোদন ও শিক্ষা দুটিই পেতে পারেন। আজ এমনই একটি জায়গার নাম বলবো যেখানে গেলে আপনি প্রায় ৮০০ বিরল প্রজাতির প্রায় ১৮,০০০ উদ্ভিদ দেখে আসতে পারবেন। এই বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ বাগানটির নাম হলো বলধা গার্ডেন। ঢাকার নারিন্দার কাছে ওয়ারী এলাকায় এটির অবস্থান। যদি উদ্ভিদ বা ঐতিহাসিক সম্পর্কে কিছু শিখতে চান তাহলে এই উদ্ভিদ উদ্যান ঘুরে আসতে পারেন।

বলধা গার্ডেনের পুকুর



নির্মাণ ও নামকরণঃ

তদানীন্তন ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০৯ সালে বাগানটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটা জমিদার বাগান বাড়ি নামে পরিচিত ছিলো। ঢাকার উচ্চবিত্তরা এখানে বিনোদনের জন্য আসতো। বলধা জমিদার এখানে  দুটি উদ্যান তৈরি করেছিলেন। বৃহত্তর সিবিলি ও ক্ষদ্রতর সাইকি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা প্রজাতির গাছ , ঔষধি গাছ ও ফুল এনে এই উদ্ভিদ উদ্যানটি সমৃদ্ধ করতে থাকেন জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী। ৩.৩৮ একর জায়গার উপর এই উদ্ভিদ উদ্যানটি অবস্থিত। জমিদারের মৃত্যুর পর এক সময় সাইকী ও সিবিলি এ দুটি উদ্যানকে এক সাথে বলধা গার্ডেন নামকরণ করা হয়। অনেকের ধারণা বলধা নাম থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ করা হয়েছে। জমিদার এখানে এইটি পারিবারিক জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

উদ্ভিদ ও ফুলের জাদুঘরঃ

পৃথিবীর দেশ থেকে এনে রোপন করা উদ্ভিদের সম্ভার বলধা গার্ডেন উদ্ভিদ ও ফুলের জাদুঘর নামে খ্যাত। গার্ডেনে প্রধানত বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ক্যাকটাস, গ্রীনহাউসের গাছপালা, জলজ উদ্ভিদ, গোলাপ, শিলালগ্ন প্রজাতি ও দেয়ালের লতা, বৃক্ষশালা ও বিবিধ গাছগাছালি রয়েছে। সব মিলিয়ে এখনে ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮,০০০ উদ্ভিদ আছে। এখানকার প্রায় সব গুলি উদ্ভিদই বিদেশ থেকে আনা এবং খুবই দুষ্প্রাপ্য। দেশ বিদেশের অনেক খ্যাতিমান লোকেরা বলধা গার্ডেন দেখতে আসতেন। কবি রবীন্দ্রনাথ বাগানটি দেখতে এসে জাপান থেকে সংগ্রহ করে আনা “ক্যামেলিয়া ” ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর বিখ্যাত “ক্যামেলিয়া” কবিতাটি রচনা করেছিলেন। বাগানের দেখার মতো উদ্ভিদ হচ্ছে “সেঞ্চুরি প্ল্যান্ট” এটি শতবর্ষে মাত্র একবার ফুটে। মিশরের ফারাওদের মমি করে রাখার জন্য যে উদ্ভিদ ব্যবহার করা হতো সেই ঐতিহাসিক “বাওবাব”  গাছটিও এখানে আছে। এটি উপমহাদেশের মধ্যে এমন একটি ঐতিহাসিক উদ্ভিদ উদ্যান যা দর্শনাথীদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় স্থান ।

ব্যবস্থাপনাঃ

জমিদার নারায়ন চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রথমে কলকাতার হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণ ট্রাস্টের অধীনে ছিলো। ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সরকারের আমলে একটি দল এর ব্যবস্থাপনায় ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার গার্ডেনের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য গার্ডেনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন বিভাগকে দেওয়া হয়। বর্তমানে বলধা গার্ডেন জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন এর একটি অংশ।

প্রবেশ মূল্যঃ জনসাধারন ১০ টাকা, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ০৫ টাকা।

খোলার সময়/সময়সূচিঃ
সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ০৮ টা থেকে বিকাল ০৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর ১২ টা থেকে ০২ টা মধ্যাহ্ন বিরতি।

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকার সব জায়গা থেকেই গুলিস্থান আসার মতো অনেক বাস আছে। গুলিস্থানের ফ্লাই ওভার ব্রীজের নিচে থেকে রিক্সা নিয়ে সরাসরি ওয়ারি বলধা গার্ডেনে চলে আসতে পারবেন। আবার মতিঝিল দিয়ে আসলে রিক্সা নিয়ে টিকাতলী মোড় হয়ে রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে খুব সহজে চলে আসতে পারবেন। গুলিস্থান ও মতিঝিল থেকে রিক্সা ভাড়া দরদাম করে উঠলে ৩০-৪০ টাকা নিবে।

আপনার ছুটির দিনের যাত্রা শুভ ও আনন্দের হোক।







Saturday, July 21, 2018

কুয়াকাটা ভ্রমণ ও ট্যুর প্ল্যান/ Kuwakata Travel

কুয়াকাটা ভ্রমণ ও ট্যুর প্ল্যান

কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত


সমুদ্র দেখলেই মনে হয় যদি এই সমুদ্রের মতো বিশালে হৃদয়ের মানুষ হতে পারতাম। এই রকম আপসোস অনেকেই করে থাকে। বাংলাদেশে প্রধান যে দুটি সমূদ্র সৈকত আছে তার মধ্যে কক্সবাজারের পরেই কুয়াকাটার অবস্থান। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটা এমন একটি সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে আপনি সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দুটিই দেখতে পাবেন। মনে হবে সমুদ্রের বুক ছিড়ে উদিত হচ্ছে আবার এই বুকের মধেই আবার নিজেকে লুকিয়ে নিচ্ছে। সাগর পাড়ের সূর্যদয় দেখা অন্য রকম মজা দিবে। তার জন্য আপনাকে কষ্ট করে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। ঘুম থেকে উঠেই আপনাকে কাউয়ার চর নামক স্থানে যেতে হবে। সেখানে আপনি মটরবাইকে বা ভ্যানে করেও যেতে পারবেন। ভ্যানে যেতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য যে একবার দেখবে তাকে কুয়াকাটায় বার বার টেনে নিয়ে যাবে। অপরূপ সুন্দর একটি দৃশ্য যা না দেখলে কারোর বর্ণনাতে আপনার মন ভরাতে পারবেনা।


কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত


সূর্যদয় দেখা শেষ হয়ে গেলে মন প্রাণ ভরে সমুদ্রের জলে নেমে স্নান করে নিতে পারেন। বিভিন্ন জায়গার মতো এখানে চোরাবালির ভয় খুবই কম। কাউয়ার চরের সমুদ্র পাড়ের লাল কাকড়া গুলোর এদিক সেদিক ছুটাছুটির দৃশ্য গুলো আপনাকে অন্য রকম একটি মজা দিবে। সময় করে পাশের জেলে পল্লীতেও ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে বিভিন্ন রকমের শুটকি দেখতে পাবেন। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের শুটকি আপনি এখানে তুলনামূলক কম দামে পাবেন। এখানকার শুটকি দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়।

সৈকতে ঘুরতে আসা দর্শনাথীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য এখানে মটরসাইকেল বা ঘোড়ার ব্যবস্থা আছে। সময় অনুসারে দর দাম করে ভাড়া নিতে পারেন। সমুদ্র উপকূলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্রলার এবং স্পিড বোট কিংবা ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা পাবেন। সেগুলোর মাধ্যমে আপনি সৈকতের আশে পাশের অপূর্ব দৃশ্য সমূহ অবলোকন করে চোখে দেখার দৃষ্টিকে পরিতৃপ্ত করে তোলতে পারবেন। খুলনা সাতক্ষীরার মতো না হলেও কুয়াকাটার সুন্দরবনের দৃশ্য গুলোও আপনার মনকে এক নতুন আনন্দ দিবে।

কুয়াকাটায় ঘুরতে গেলে সেখানকার আদিবাসি রাখাইন পল্লী ঘুরে আাসতে ভুলবেন না। তাদের সাধারণ জীবন যাপন এবং পুরানো স্থাপত্য নিদর্শন দেখে আপনাকে মুগ্ধ করবে। দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দিরটি এই রাখাইন পল্লীতে অবস্থিত। গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন বিশাল আকৃতির মূর্তি ( যার উচ্চতা ৩৬ ফুট ) দেখতে পাবেন। মন্দির এর ভিতরের ভাব গম্ভীর পরিবেশ দেখে মনে হবে আপনি থাইল্যান্ড বা কোন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী দেশে এসেছেন। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১০ কিঃলিঃ দূরে এর অবস্থান। অটো, ভ্যান বা রিক্সা করে সেখানে যেতে পারবেন।

কিভাবে যাবেন ঃ
কুয়াকাটায় সড়ক এবং নদী পথ দুই পথেই যাওয়া যাবে। গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে এসি ও ননএসি দুই রকমের বাস পাবেন। নন এসি ভাড়া নিবে ৫০০-৫৫০ টাকা। এসি ৭০০ টাকার মতো। সময় লাগবে ১১-১২ ঘন্টা। তবে বরিশাল বা কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য নদী পথেই যাওয়াটা একটি অন্য রকম রোমাঞ্চ মনে হবে। কারণ ‍ বাংলাদেশের অন্য জেলা গুলোতে আমরা সড়ক পথেই গিয়ে থাকি। তাই কুয়াকাটায় নদী পথে যেতে হলে যাওয়ার একদিন আগে সদরঘাট থেকে টিকিট কেটে নিতে পারেন। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায় কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। কেবিন ভাড়া নিবে ৯০০-১১০০ টাকা। ডাবল কেবিন ১৮০০-২০০০ টাকা। ডেকের ভাড়া সময় বুঝে ১৮০-২০০ টাকা। ভ্রমণে ১০-১৫ জনের বা তার উর্ধ্বে হলে ডেকে অনেক মজা করে যাওয়া যায়। পটুয়াখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে সকাল ৬টা থেকে প্রতি ঘন্টায় ছেড়ে যায় কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। লঞ্চঘাট থেকে বাস স্ট্যান্ড এর ভাড়া ২৫-৩০ টাকা। সেখান থেকে জন প্রতি ১০০ টাকা কুয়াকাটা পর্যন্ত।

কুয়াকাটায় থাকার জন্য ভালো মানের অনেক হোটেল মোটেল রয়েছে। এছাড়া দুটি ডাক বাংলো এবং সাগর কন্যা পর্যটন হলিডে হোমস আছে। সেই সাথে কিছু গেস্ট হাউস আছে। যেগুলোতে আপনি মান বুঝে ৩০০ টাকা ২০০০ টাকার মধ্যেই থাকার সুব্যবস্থা করে নিতে পারবেন।

হোটেলের আশে পাশেই ঘরোয়া পরিবেশে তৈরী বেশ কয়েকটি খাবার দোকান আছে। খুব কম খরচে আপনি সেগুলোতে তৃপ্তিভরে খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই অর্ডার করার করার আগে দাম জেনে নিবেন।

সাগর কন্যা কুয়াকাটা
সাগর কন্যা কুয়াকাটা








Monday, July 16, 2018

লালবাগ কেল্লা/ Lalbag Kella, Dhaka.

লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা


বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ লালবাগ কেল্লা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র  মুঘল সুবাদার মুহাম্মদ আজম শাহ ১৬৭৮ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার উত্তরসুরী, মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি।
ইতিকথা: মুঘল রাজপুত্র আজম শাহ (সম্রাট আওেরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র) বাংলার সুবাদার থাকাকালীন ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মানকাজ শুরু করেন। নির্মানকাজ শেষ হবার আগেই মাঠারা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব রাজপুত্র শাহ আজমকে দিল্লি ডেকে পাঠান। একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মানের পর দুর্গ নির্মানের কাজ থেমে যায়। ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে সুবাদার শায়েস্তা খাঁ পুনরায় সুবাদার হিসেবে বাংলায় এসে দুর্গের নির্মানকাজ শুরু করেন। সায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানুর (পরী বিবি) অকাল মৃত্যু ঘটে। কন্যার মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁ দুর্গটি অপয়া মনে করেন। ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মানকাজ বন্ধ করে দেন। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ত্যাগ করলে দুর্গটির জনপ্রিয়তা হারায়। ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তরের এটিই ছিল প্রধান কারণ। মুঘল আমল সমাপ্ত হওয়ার পর দুর্গটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে এলাকাটি ‘‘আওরঙ্গবাদ’’ নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘‘লালবাগ ‘’ হয় এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে

পরী বিবির সমাধি: লালবাগ কেল্লার তিনটি স্থাপনার মধ্যে অন্যতম একটি পরী বিবির সমাধি। পরী বিবি ছিলেন বাংলার মুঘল সায়েস্তা খাঁর কন্যা। এই মাজারটি নির্মাণ করেন শায়েস্তা খাঁ তাঁর কন্যার স্মরণে। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে জনসাধারণের জন্য একটি দরজা উন্মুক্ত রয়েছে। উন্মুক্ত এই দরজা দিয়ে ঢুকলে সোজা চোখে পড়বে পরী বিবির সমাধি। পরী বিবির অন্য নাম ইরান দুখত রাহমাত বানু। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজম এর সাথে ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দ ৩ মে পরী বিবির বিয়ে হয়। ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে অকালমৃত্যুর পর তাঁকে নির্মানাধীন লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে সমাহিত করা হয়। পরী বিবির মাজার এর স্থাপনাটি চতুষ্কোণ।

 দর্শনার্থীদের পরিদর্শনের সময়সূচি
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর
বৃহস্পতি থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ১:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা (দুপুর ১টা থেকে ১:৩০মি. বিরতি)
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২:৩০মি/দুপুর ২:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত
সোমবার দুপুর ২:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত
অক্টোবর থেকে মার্চ
বৃহস্পতি থেকে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত  (দুপুর ১টা থেকে ১:৩০মি. বিরতি)
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২:৩০মি এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত
সোমবার দুপুর ১:৩০ মি. থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত


ঘুরে আসুন ঢাকার ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল




আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল

ছুটিতে কোথায় ঘুরতে যাবো এই নিয়ে ঢাকায় অবস্থানরত অনেকেই চিন্তায় থাকে । সাপ্তাহিক ছুটিতে ঢাকায় ঘরে বেড়ানোর মতো অনেক দর্শনীয় স্থান আছে যেখানে আপনি আপনার পরিবার ও বন্ধ বান্ধব নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। তার মধ্যে পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল অন্যতম। আমার বিশ্বাস এখানে আপনি অনেক কিছু দেখে তৃপ্তি ভরে বাসায় ফিরতে পারবেন। আহসান মঞ্জিল দেখা শেষ করে সদরঘাটের লঞ্চঘাট দেখে যেতে ভুলবেন না।

আহসান মঞ্জিল নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। আহসান মঞ্জিল এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আব্দুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন। আহসান মঞ্জিলের নির্মাণকাল ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে  থেকে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই জাদুঘরটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত জাদুঘর।

মুঘল আমলে এখানে জামালপুর পরগণার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহর রঙমহল ছিল এই স্থানটি। তার পুত্র মতিউল্লাহ’র নিকট তেকে রঙমহলটি ফরাসিরা ক্রয় করে এখানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। ১৮৩০ সালে খাজা আলীমুল্লাহ ফরাসিদের নিকট থেকে ক্রয় করে নিজের বাসভবনে পরিণত করেন। এ বাসবভনকে কেন্দ্র করে খাজা আব্দুল ঘণি মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানী নামকিএকটি ইউরোপীয় নির্মাণ ও প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরী করান যার প্রধান ইমারত ছিল আহসান মঞ্জিল
এক মিটার উঁচু বেদীর উপর স্থাপিত দ্বিতল প্রাসাদটি। এই প্রাসাদটির ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টি কক্ষ বিভিন্ন প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা মোট ৪ হাজার ৭৭টি। জাদুঘরে রয়েছে নওয়াব আমলের ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না, আলমারি, সিন্দুক, কাচ ও চিনামাটির থালাবাসন, নওয়াবদের হাতির মাথার কঙ্কাল গজদন্ত, নওয়াবদের ব্যবহৃত অলংকার, রুপা ও ক্রিস্টালের তৈরী চেয়ার-টেবিল, তৈলচিত্র, নাচঘর, সোনা ও রুপার তারজালিকাজ আহসান মঞ্জিলের নকশা। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে তোষাখানা ও ক্রোকারিজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র এবং নওয়াব এস্টেটের পুরনো অফিস এডওয়ার্ড হাইস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শন করা হয়েছে।

কিভাবে যাবেন ঃ
ফার্মগেট থেকে গুলিস্তান আসার মতো অনেক বাস পাবেন। আবার যারা উত্তরা সাইট থেকে আসবেন তারাও গুলিস্তান পর্যন্ত আসে এরকম বেশ কয়েকটি বাস পেয়ে যাবেন। গুলিস্তানে নামার পর সরাসরি এখান থেকে রিক্সা করে আহসান মঞ্জিল যাওয়া যায়। ভাড়া দর দাম করে নিলে ৬০-৭০ টাকা নিবে। অথবা গুলিস্তান থেকে বাসে করে বাংলাবাজার আসতে পারেন। বাংলাবাজার থেকে রিক্সা করে আহসান মঞ্জিল যাওয়া খুব সহজ। ভাড়া ২০-৩০ টাকা নিবে। 
আহসান মঞ্জিল দর্শনার্থীদের জন্য খোলার সময় সূচি

গ্রীষ্মকাল সকাল ১০:৩০মি. থেকে ৫:৩০ মি. পর্যন্ত
শীতকাল সকাল ০৯:৩০মি. থেকে ৪:৩০ মি. পর্যন্ত
শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত
বৃহস্পতিবার সপ্তাহিক ছুটি



আহসান মঞ্জিল 
আহসান মঞ্জিল




Friday, July 13, 2018

ঘুরে আসেন সোনারগাঁও, পানাম নগর এবং বাংলার তাজমহল


সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবার পরিজন ও বন্ধবান্ধব নিয়ে ঢাকার আশে পাশে গড়ে উঠা ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে আসতে পারেন। অনেকে মনে করেন ঘুরতে বের হলে টাকা খরচ হয় অনেক। কিন্তু আমি বলবো ভালো জায়গায় ঘুরতে গেলে আপনার খরচের চেয়ে লাভের পরিমানই বেশি হবে। ঘুরতে গেলে যেমন আপনার প্রতিদিনের একঘেয়েমি দূর হবে তেমনি নতুন জায়গা বা পুরাতন জিনিস নতুন করে দেখলেও খারাপ লাগবে না। ঢাকার কাছাকাছি জায়গা গুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক কিছু দেখতে চাইলে নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁও যেতে পারেন। এখানকার যে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে সেগুলো আপনার ও আপনার পরিজন বন্ধু-বান্ধবদের মন ভরিয়ে তোলবে। আর এগুলো হলো পানাম নগরী, সোনারগাঁও জাদুঘর (বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন)         এবং বাংলার তাজমহল  ।

Lipa and St. Martha's School Group


পানাম নগর:

ঈসা খাঁর আমলে বাংলার রাজধানী পানাম নগর। ঢাকা শহর থেকে পানাম নগরের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার এবং সোনাগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। নগরের বুক চিড়ে চলে গেছে পানাম সড়ক। সড়কের দু’পাশে সারি সারি একতলা, দ্বিতল ও তিনতলা অট্টালিকাগুলোই পানাম নগরে আসল সৌন্দর্য। এই এলাকাটি ১৯শ শতকে হিন্দু উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিল। এখানে বাস করতেন কাপড় ব্যবসায়ীরা। এখানকার পুরানো সুদৃশ অট্টালিকাগুলো ১৯শ শতকের ঐতিহাসিক স্মৃতি ধারণ করছে। পানাম নগরে টিকে থাকা বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২ টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য। পানাম নগরে উত্তর পাশে ৩১টি দক্ষিন পাশে  ২১টি বাড়ি রয়েছে। পানাম নগরের পাশ ঘেষে পঙ্খীরাজ খাল বয়ে গেছে। শের শাহ আমলে নির্মিত কিছু নিদর্শন আজও মানুষের চোখকে বিমোহিত করে। পানাম নগর এমন একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন যা দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক পর্যটক ছুটে আসেন।
সাপ্তাহিক ছুটিঃ বুধ ও বৃহস্পতিবার
প্রবেশ মূল্যঃ পানাম নগরে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা মাত্র।

Lipa and St. Martha's School Group


সোনারগাঁ জাদুঘর

সোনারগাঁও  বা সুবর্ণগ্রাম দেড়শ বছরের প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ পুরানো ধ্বংসাবশেষ নগরী। ঢাকা শহর থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে এর অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বেষ্টিত সোনারগাঁও বাংলার প্রাচীন রাজধানী নামেও পরিচিত। সোনারগাঁও তৎকালীন সময়ে শিক্ষা-দীক্ষায়, কৃষি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প ও কারুকার্যে বিশ্ববিখ্যাত ছিলো। সোনারগাঁও এর মসলিন কাপড় ছিল সারা বিশ্বে সমাদৃত। কথিত আছে যে, বাংলার প্রথম মসজিদ সোনারগাঁওয়ের গোয়ালদী গ্রামে নির্মিত হয়। পৃথিবীর দীর্ঘতম সড়ক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড সোনারগাঁও হতে পাঞ্জাব পর্যন্ত শের শাহের আমলে নির্মিত হয়। সোনারগাঁওয়ে রয়েছে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ এর মাজার, রয়েছে পাঁচ পীরের দরগাহ সহ অসংখ্য গুনীজনের স্মৃতি।
জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

Lipa Hajong


বাংলার তাজমহল

যারা ভারতের আগ্রায় গিয়ে সম্রাট শাহজাহনের স্ত্রীর প্রতি বিস্ময়কর ভালোবাসার নিদর্শন তাজমহল দেখেননি তারা যদি এর প্রতিকৃতি দেখতে চান তাহলে তারা ঘুরে আসতে পারেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে ১৮ বিঘা জমির ওপর নির্মিত বাংলার তাজমহল। ২০০৮ সালে উদ্বোধনের মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য এটি দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও আশে পাশে মনোরম পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মদনপুর বস্তল এশিয়ান হাইওয়ে থেকে রিক্সা, অটো বা সিএনজিতে সময় লাগবে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট।




কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে সোনারগাঁও যাওয়া খুব সহজ। ঢাকা গুলিস্থান এর স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে থেকে বেশ কয়েকটি বাস ছাড়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে। এদের মধ্যে বোরাক ও দোয়েল অন্যতম। ভাড়া নিবে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘন্টা। সোনারগাঁও এর মোগড়া পাড়া স্টেশনে নেমে রিক্সা, অটো বা সিএনজি করে জাদুঘরের গেট পযর্ন্ত যাওযা যাবে। ভাড়া নিবে ২০ থেকে ৩০ টাকা মাত্র।


Photo Click By Lipa Hajong